n/a

ছবিঃ শুষ্ক ত্বকের নিবিড় পরিচর্যায় চন্দনের ব্যবহার .

2023-03-12 14:05:05

শুষ্ক ত্বকের নিবিড় পরিচর্যায় চন্দনের ব্যবহার

শীতের  মৌসুমের এ সময়টাতে ত্বকের একটু বাড়তি রূপচর্চা খুব দরকার হয়ে থাকে। চন্দনে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য ঔষধি গুণাগুণ। প্রাচীন কাল থেকে মেয়েদের রূপচর্চার অন্যতম একটি বিশেষ উপাদান ছিল চন্দন। একসময় তো বিয়ের কনেকেও সাজানো হতো চন্দন দিয়ে। বিয়ের আসরে কনের কপালে ফুটে থাকত চন্দনের ফোঁটা। ত্বকে চন্দনের স্পর্শকে শুভ হিসেবেই বিচার করা হতো। বর্তমান সময়েও বিভিন্ন রকম কসমেটিক্স ও সুগন্ধীতে চন্দন ব্যবহৃত হয়। 

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় চন্দন বেশ উপকারী। মানুষের কাছে খুব প্রিয় একটি নাম চন্দন। এর সুঘ্রাণ এবং কার্যকারিতার কারণেই রূপচর্চার ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ত্বকের অতিরিক্ত তেলও শুষে নেবে। অ্যান্টিসেপটিক হিসেবেও কাজ করবে। রূপচর্চায় চন্দনের ব্যবহার করা হলে পরবর্তীকালে ত্বক ঠান্ডা পরশও পায়। 

বিশেষজ্ঞরা চন্দনকে সব গুণে গুণান্বিত একটি উপাদান হিসেবেই দেখে থাকেন।চন্দনগাছের কাঠ শুকিয়ে গুঁড়া করে চন্দনগুঁড়া বা স্যান্ডেলউড পাউডার পাওয়া যায়। তাহলে জেনে নেওয়া যাক চন্দন আমাদের  ত্বকের জন্য কিভাবে সাহায্য করে :

  • চন্দন সহজেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • চন্দন ত্বকের ক্লান্তিভাব দূর করে।
  • চন্দন ব্রণ বা ত্বকের দাগ দূর করে।
  • চন্দন ত্বকের ব্ল্যাকহেডস দূর করতে সাহায্য করে।
  • চন্দনের সঠিক ব্যবহার ত্বকে কোমলতা ফিরিয়ে এনে দেয়।
  • আমাদের অনেকের ত্বক বয়সের কারণে ধীরে ধীরে ঝুলে গেছে, বিশেষ করে তাদের জন্য চন্দন বেশ উপকারী একটি উপাদান । কারণ, এটি আমাদের ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করে ।

তবে রূপচর্চা থেকে সঠিক ফল পেতে হলে অবশ্যই সঠিক উপায়ে কাজটি করা প্রয়োজন। শুষ্ক ত্বকের জন্য বাড়তি ময়েশ্চারাইজার দরকার হয়। চন্দন ত্বককে হালকা টানটান করে দেয়। তাই শুষ্ক ত্বকের জন্য চন্দনের সঙ্গে মধু ও দুধ ব্যবহার করা ভালো। দুধে আছে ল্যাকটোজেন ও মধুতে অ্যান্টিবায়োটিক। চন্দনের সঙ্গে এই দুটি উপাদান মিশিয়ে মুখ, হাত ও পায়ের ত্বকে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

চন্দনের কয়েকটি ফেইস প্যাক -

বলি রেখা দূর করতে চন্দন প্যাকঃ

চন্দন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমূহের সমন্বয়ে গঠিত যা আপনার মুখের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে বিরোধী প্রদাহজনক এজেন্ট, যা মুখের বলি রেখা দূর করতে অধিক সাহায্য করে। মসৃণ ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য হলুদ বাটা ও চন্দনের গুঁড়ো এক সাথে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালো ভাবে মুখ  ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের রঙ হবে উজ্জ্বল এবং মসৃণ এবং বলিরেখা দূর হবে ।

পোড়াভাব দূর করতে চন্দন প্যাকঃ

রোদে পোড়া দাগ দূর করতে চন্দন বেশ কার্যকর। শসার রস, চন্দনের গুঁড়ো, দই ও গোলাপজল একসাথে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে রোদে পোড়া ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। এই ফেস প্যাক রোদে পোড়া ভাব কমাবে এবং রোদের পোড়ার কারণে ত্বকের জ্বলা কমাতে সাহায্য করবে।

ত্বকের উজ্জ্বলতায় চন্দন প্যাকঃ

ডিমের কুসুম বা মধু, ও চন্দন গুঁড়া একসাথে মিক্সড করে পেস্ট তৈরি করে লাগালে মুখের দাগ দূর হয়। প্রতিদিন দুই চা চামচ চন্দনের গুঁড়ো ও গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার এই প্যাক মুখে লাগিয়ে নিয়ে ১০- ১৫ মিনিট রাখুন। এর পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন এভাবে প্রতিদিন ব্যহার করলে মুখের দাগ দূর হবে ও ত্বক উজ্জ্বল হবে।

ডার্কসার্কেলের সমস্যায় চন্দন প্যাক:

যাদের ডার্কসার্কেলের সমস্যা তারা অল্প পরিমাণ চন্দনের গুড়ার সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে চোখের চারপাশে লাগান। সারা রাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে চোখের চারপাশের কালো দাগ কমে যাবে।

চন্দন, দুধের প্যাক:

পাউডার দুধ নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা চন্দনের তেল ও পরিমাণমত গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবারে প্যাক-টি মুখে, গলায় ও ঘাড়ে লাগিয়ে রাখুন ২০-২৫ মিনিট। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ও ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারী। ভাল ফলাফল পেতে সপ্তাহে তিন বার ব্যবহার করুন।

চন্দন, নারকেল তেল এবং বাদাম তেলের প্যাক:

চন্দনের গুঁড়ার সাথে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল ও বাদাম তেল দিয়ে এর সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক-টি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুব উপকারী কারণ এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়। ভাল ফল পেতে সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।

চন্দন, গোলাপ জল , টমেটোর রস এবং মুলতানি মাটির প্যাক:

চন্দন পাউডারের সাথে টমেটোর রস এবং মুলতানি মাটি ভাল ভাবে মিশিয়ে অল্প অল্প করে গোলাপ জল যোগ করে পেস্ট বানিয়ে নিন। এবারে মুখে লাগিয়ে রাখুন প্রায় ৩০ মিনিট। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক-টি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয় এবং ভেতর থেকে ত্বকের ময়লা দূর করে ত্বককে খুব অল্প সময়ে উজ্জ্বল করে তোলে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই প্যাক-টি বিশেষ উপকারী।

চন্দন গোলাপ জল ও কমলার খোসার প্যাক:

চন্দন পাউডার, কমলার খোসার পাউডার ও গোলাপ জল একসাথে মিশিয়ে প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন এবং ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এই প্যাক-টি ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং ত্বককে মসৃণ করে তোলে অল্প কয়েকদিনেই।


চন্দন, মুলতানি মাটি এবং লেবুর প্যাক:

একটি বাটিতে মুলতানি মাটি এবং চন্দন পাউডার, লেবুর রস ও গোলাপ জল নিয়ে নিন। তারপর সবগুলো উপাদান একত্রে পেস্ট তৈরি করে ২০-৩০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে এবং লাবণ্যতা ফিরিয়ে আনে । চন্দনের এই প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন। এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী।

আরও জানুন-