n/a

ছবিঃ শিশুদের ডেঙ্গুর লক্ষণ ও তার প্রতিকার.

2023-08-11 06:20:38

শিশুদের ডেঙ্গুর লক্ষণ ও তার প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশা বাহিত রোগ। ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গগুলির মাঝে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি। দুই থেকে সাত দিনের মাঝে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে।


ডেঙ্গু জ্বর ছোট বড় সবার জন্য হুমকিস্বরূপ। এই জ্বর এডিস এজেপটি নামক এক ধরনের স্ত্রী মশার কামড়ে হয়। একজন রোগী থেকে অন্য রোগীতে এই জ্বর সংক্রমিত হয় না। এ বছর গত কয়েক বছরের তুলনায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি। এবার শিশুরাও অনেক বেশি পরিমাণে আক্রান্ত হয়েছে।আপনারা জানেন আমাদের শরীরে পানির উপাদান ৬০ ভাগ। শিশুদের শরীরে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ পানির উপাদান থাকে। ডেঙ্গু জ্বরে শরীরের পানি কমে যায়। এই পানি যদি কমে যায়, এটি এত বেশি কমে যেতে পারে যে শিশু অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। শিশুর রক্তচাপ কমে গিয়ে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই, শিশুর ডেঙ্গু হলে খুব দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পানি ও ওরস্যালাইন পান করা শিশুদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে বাচ্চাদের এক লিটার পানিতে  একটি ওরস্যালাইন মেশাতে হবে।


লক্ষনঃ

শিশু ও বড়দের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের কিছু উপসর্গ থাকে একই রকম।জ্বর হলেই উদ্বিগ্ন না হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


১। ডেঙ্গুর ক্লাসিক্যাল জ্বরসমূহঃ

  • ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়।
  • জ্বর ১০৪ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • তীব্র পেটে ব্যথাও হতে পারে।
  • মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়।
  • এই জ্বরের আরেক নাম ব্রেক বোন ফিভার।
  • জ্বর হওয়ার ৩-৫ দিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়, যাকে বলা হয় স্কিন র‌্যাশ। যা অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মতো।
  • এমনকি বমিও শুরু হতে পারে।
  • রোগী অল্পতেই অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে ও খাবারে রুচি কমে যায়।
  • সাধারণত ৪-৫ দিন পর জ্বর এমনিতেই চলে যায়। কারও ক্ষেত্রে ৩ দিন পর আবারও জ্বর আসে।

২। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরঃ

রোগীর এই অবস্থাটি সবচেয়ে জটিল। এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরও সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-


  • শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন- চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সাথে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাহিরে থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। নারীদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি।
  • এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে , পেটে পানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস হয়। আবার কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

৩। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমগুলোঃ

ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণগুলো হলো-


  • রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া।
  • নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।
  • রোগীর হাত পা ও শরীরের অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়।
  • প্রস্রাব কমে যাওয়া।
  • ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের করণীয়

১) ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান দায়ী হলো এডিস মশা। এই মশা নোংরা পানিতে বাসা বাঁধে। তাই পুরানো যেসব জিনিসে পানি জমতে পারে, যেমন ফুলদানি, ফুলের টব, এসি ফ্রিজের পেছনের অংশ, বাধরুমে বালতি বা হাড়িতে, কমোডের আশেপাশের কোণাতে যেন পানি জমে না থাকে, সেই চেষ্টা করতে হবে। এই জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু মশা বাসা বাঁধে। গাড়ির যন্ত্রপাতিও খেয়াল রাখতে হবে। ময়লা পানি জমে থাকতে পারে। শিশুদের খেলনার মধ্যে যেন পানি জমে না থাকে।


২) বাসার চারপাশে মশারোধী নেট, ঘরের কোণাতে মশানিরোধক যন্ত্র ব্যবহার করবেন। জানালার কার্নিশে অনেক সময় ময়লা ভাঙাচোরা জিনিসে যেন পানি জমে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।


৩) পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। কমোডের আশেপাশের জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।


৪) শিশুর জ্বর এর মাত্রা কমানোর জন্য বার বার ভেজা কাপড় দিয়ে স্পঞ্জ করতে হবে। তরল খাবার, ফলের রস বেশি করে খেতে হবে। জ্বরের মাত্রা বেশি হলে শিশুকে হাসপাতলে ভর্তি করতে হবে।


৫) প্লেটিলেটের মাত্রা ঠিক আছে কিনা তা নির্ণয় করতে হবে।


৬) রোগীর দেহের কোথাও ঘা হয়েছে কিনা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।


৭) শিশুর মল, বমি দিয়ে রক্ত যাচ্ছে কিনা, পর্যবেক্ষণ করবেন।


৮) অবস্থা খারাপ মনে হলে, শিশুকে বাসায় না রেখে, দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করান। অনেক সময় রক্তপাত হলে, রক্ত দিতে হয়। তাই অবস্থা আশঙ্কাজনক হবার পূর্বেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


ছোট বা বড় কারো ক্ষেত্রেই ডাইক্লোফেনাক ব্যবহার করা যাবে না। প্যারাসিট্যামল ব্যবহার করা নিরাপদ।


আরও জানুন-