n/a

ছবিঃ গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়.

2023-09-22 15:54:39

গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়

দৈনন্দিন জীবনে আমরা ছোট বড় সবাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগে থাকি । অ্যাসিডিটির সমস্যাটাকে খুব মামুলি বিষয় হিসাবে দেখা হয়।

কর্মব্যস্ত জীবনে একটাকে ‘পার্ট অব লাইফ’ বলেন কেউ কেউ। কিন্তু অ্যাসিডিটির জন্য নিয়মিত ওষুধ খেয়ে গেলে শরীরে অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যা অনেকেই তোয়াক্কা করেন না।

বুকজ্বলা, অ্যাসিডিটির হলেই মুঠোয় মুঠোয় ওষুধ খাওয়া মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চললেই মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই পাবেন  গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি।

তৈলাক্ত ও ভারী খাবারই মূলত এর জন্য দায়ী। শুরুতে সচেতন না হলে এ সমস্যা পরবর্তীতে আলসারে রূপান্তর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।অনেকেই এটা থেকে মুক্তি পেতে ঝুঁকে পরেন ওষুধের দিকে। এতে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্তি মিললেও আসলে এটি ক্ষতিকর।

তবে এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো নিয়মিত খেলে খুব সহজেই আপনার গ্যাস্ট্রিক চিরতরে দূর করতে সাহায্য করবে। যেমন-

  • আদা:
    আদা এ ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার। পেট ফাঁপা ও পেটে গ্যাস হলে আদা কুচি করে লবণ দিয়ে খান, দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা ভালো হবে।

  • দই:
    দইয়ে ল্যাকটোব্যাকিলাস, অ্যাসিডোফিলাস ও বিফিডাসের মতো নানা ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই সকল উপকারী ব্যাকটেরিয়া দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে সেই সাথে খারাপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। তাই দই খেলে হজম ভালো হয়, গ্যাস কমে। এই জন্য খাবারের পর দই খাওয়াটা বেশ কার্যকর।

  • রসুন:
    অ্যাসিডিটির সমস্যা হ্রাস করতে রসুনের কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে এক কোয়া রসুন খেয়ে ফেললেই স্টমাকে অ্যাসিড ক্ষরণের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ফলে গ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন উপসর্গ ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু করে।

  • পুদিনা পাতার পানি:
    পুদিনা পাতা কম বেশি সব জায়গায় পাওয়া যায় । পুদিনা পাথা গরম পানিতে ফুটিয়ে খেলে পেট ফাঁপা, বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে।

  • পানি:
    পানি পানের সুফলের কথা সবাই জানেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই গ্লাস করে পানি পান করবেন, দেখবেন সারাদিন আর গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে না। কারণ পানি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া পানি পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখতেও কাজ করে।

  • কলা:
    যারা বেশি করে লবণ খান,সাধারণত তাদের গ্যাস ও হজমে সমস্যা হতে পারে। কলায় যে পটাশিয়াম থাকে, তাতে শরীরের সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য বজায় থাকে। কলা হজমে সাহায্য করে। কলা দেহ থেকে দূষিত পদার্থ দূর করে দেয়।

  • শসা:
    শসা পেট ঠাণ্ডা রাখতে খুব ই উপকারী । এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের সমস্যা কমায়।

  • আনারস:
    আনারসে রয়েছে ৮৫ শতাংশ পানি এবং ব্রোমেলিন নামক হজমে সাহায্যকারী প্রাকৃতিক এনজাইম যা অত্যন্ত কার্যকরী একটি পাচক রস। এটি পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখে। এছাড়া আনারস ত্বকের জন্যও বেশ উপকারী।

  • হলুদ:
    হজম সংক্রান্ত সব ধরনের সমস্যা সমাধানে হলুদ বেশ কার্যকর। এটি চর্বিজাতীয় খাবার হজমে সাহায্য করে।

  • ডাবের পানি:
    ডাবের পানি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই দূর করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ফাইবার, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং পাশাপাশি অ্যাসিডিটি কমায়। এছাড়াও বুক জ্বালা পোড়া ও পেটে ব্যথা কমাতে ডাবের পানি অত্যন্ত কার্যকরী।

এই উপায়গুলো নিয়মিত মেনে চললে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অবশ্যই সেই সাথে খাবারে অনিয়ম ও তৈলাক্ত ভাজা পোড়া জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।


গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডিটির যত কারণ

পাকস্থলীর গ্যাসট্রিক গ্ল্যান্ডে অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণের ফলে অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা হয়। সাধারণত অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে, অতিরিক্ত চা, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা ইত্যাদি কারণে পেটে গ্যাস হতে পারে। অ্যাসিডিটির কারণেই পেট ফুলে ওঠে, আলসার, ঢেঁকুর ওঠে, বুকজ্বলা করে এবং পেটের যাবতীয় অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়।

গ্যাস্ট্রিক এড়াতে যা যা করবেন

  • যখনই অ্যাসিডিটির সমস্যা বোধ করবেন, তখনই চেষ্টা করবেন ঠাণ্ডা পানি পান করতে। এ সময়টাতে কোমল পানীয় এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কফি না খাওয়ার চেষ্টা করুন। সাইট্রাস ফল থেকে দূরে থাকুন। এতে পেটে গ্যাস আরো বাড়বে। বরং দুধ-চিনি ছাড়া হার্বাল চা পান করতে পারেন। 
  • ঘন ঘন পেটে গ্যাস হওয়ার প্রবণতা থাকলে প্রতিদিন কলা ও তরমুজ খেলে উপকার পাবেন। এমন পরিস্থিতিতে শসাও বেশ উপকারি। আদা খেলেও অ্যাসিডিটিে আরাম পাওয়া যায়। তাই বাড়িতে আদার গুঁড়া রাখতে পারেন।

  • অতিরিক্ত পরিমাণে রসুন, লবণ, তেল, মরিচ দেওয়া খাবার অর্থাৎ বেশি বেশি তেল-মসলা দেওয়া খাবার খাবেন না। সবচেয়ে ভালো হলো শাকসবজি খাওয়া। আর অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে দীর্ঘ সময় ক্ষুধার্ত থাকবেন না। ক্ষুধা লাগলেই পুষ্টিকর কিছু খেয়ে নেবেন।

  • ডাবের পানি পেটের গ্যাস কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। হঠাৎ পেটে গ্যাস হয়ে গেলে এক গ্লাস ডাবের পানি শরীরের ভেতর জ্বালা ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ খেলেও এই গ্যাস্ট্রিকের অনেকটা কমে যায়।

  • বদল আনতে হবে খাওয়াদাওয়ার নিয়মেও। অসময়ে এবং অনিয়মিত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে রাতের খাবার খেতে হবে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে। খাওয়ার পরই শুয়ে পড়বেন না।  ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন। এতে ভালো উপকার পাবেন।

  • ধূমপান, মদ্যপান, দুধ চা, কফি এবং অ্যাসপিরিনের মতো ওষুধ এড়িয়ে চলুন। নিজেকে অযথা স্ট্রেস থেকে দূরে রাখুন। বেশি দুশ্চিন্তা করবেন না। এতে স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে।

  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা যেন প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। এর কিছু কারণও রয়েছে। সময়মতো খাবার না খাওয়া, বাইরের খাবার বেশি খাওয়া ইত্যাদি এর জন্য দায়ী। মূলত খাওয়া দাওয়ার অনিয়মের দলে শরীরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।

অতিরিক্ত মাত্রায়  ফাইবার, চর্বি, মাত্রাতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার খেলেও গ্যাস হতে পারে পেটে। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার আরও একটি কারণ আছে। কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলো একসঙ্গে খেলে পেটের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে। সেগুলি কী কী? চলুন জেনে নিই-

দুধ ও কলা

দুধ আর কলা দুটোই আমাদের  স্বাস্থ্যের জন্য খুব বেশ উপকারি। পুষ্টিবিদ থেকে চিকিৎসক, সবাই প্রতিদিন খাবারের পাতে এই দুটি খাবার রাখার কথা বলে থাকেন। তবে দুধ আর কলা একসঙ্গে খাওয়া চলবে না। এতে উপকারের বদলে ক্ষতি হবে শরীরের। এই দুটি খাবার একসঙ্গে হজম হতে চায় না। তাই এগুলো একসঙ্গে না খাওয়াই ভালো।

ভাতের সাথে  ফল

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো— সব ক্ষেত্রেই ফল বেশ উপকারি। তবে ভাত আর ফল একসাথে না খাওয়াই ভালো। কারণ ফল খুব দ্রুত হজম হয়ে যায়।

অন্যদিকে ভাত হজম হতে বেশি সময় লাগে। ফলে হজমের সাধারণ ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় গ্যাসের সমস্যা। তাই সুস্থ থাকতে ভাতের সাথে ফল কিংবা সালাদ এড়িয়ে চলুন।

পানীয় দ্রব্যের সাথে চিজ জাতীয় খাবার না খাওয়াঃ

পিৎজার বা বার্গারের সাথে সফট বা কোল্ড ড্রিংকের যুগলবন্দি সম্পর্ক আসলেই অত্যন্ত জনপ্রিয়। একটু  সফট পানীয় না খেলে যেন পিৎজা বা বার্গার খেয়ে মন ভরে না।প্রকৃতপক্ষে এমনটা করে কিন্তু নিজের ক্ষতি করছেন দিনের পর দিন।

চিজ জাতীয় খাবারের  সাথে সফট বা কোল্ড ড্রিংকস জাতীয় পানীয় কখনই খাবেন না। এতে করে গ্যাস্ট্রিকের বা আলসারের মত কঠিন সমস্যা তো হবেই,তাছাড়া  আরও অনেক সমস্যা হতে পারে।


আরও জানুন-