n/a

ছবিঃ সন্তানদের প্রতি সমতা বজায়ের গুরুত্ব.

2023-08-11 06:17:49

সন্তানদের প্রতি সমতা বজায়ের গুরুত্ব

তনিমা তার দুই মাসের কন্যাকে নিয়ে হসপিটালের বেডে। গত দুই মাস তনিমার গোটা পরিবার ছোট্টো সোনার আগমনে আনন্দে ভাসছিল । হঠাৎ-ই বাচ্চার জন্ডিসের সিমটম দেখা দিতেই বাড়ির  সবাই মনমরা। ডাক্তারবাবু , মা এবং বাচ্চাকে চিকিৎসার জন্য হসপিটালে ভর্তির পরামর্শ দেন । বাড়ির সকলেই মা -বাচ্চার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ।


হসপিটালে থাকতে থাকতে সুস্থ মানুষও যেন অসুস্থ হয়ে পড়ে । তনিমার ও প্রায় সেরকমই অবস্থা । এখানের গন্ধ, পরিবেশ, খাওয়া দাওয়া সব যেন সুস্থ তনিমা কে দিন দিন অসুস্থ করে তুলছে ।তার ওপর রাত জাগা, বাচ্চার দেখাশোনা সব মিলিয়ে।


বাড়ির লোকজন সকালে এক ঘন্টা এবং বিকেলে এক ঘন্টা থাকতে পারে কিন্তু বাকি সময়টা তনিমাকেই বাচ্চার দেখাশোনা  করতে হয় ।কখনো কখনো খুব অসুবিধা হয়। খুব কাঁদলে একা সামলানো কিম্বা বাথরুমে যাওয়ার থাকলে বেশ অসুবিধা হয়। বেডের মধ্যে একা বাচ্চাকে শুইয়ে রাখতে ;অল্প সময়ের জন্য হলেও অস্থির লাগে তনিমার।


এই হসপিটালেই তনিমার ডেলিভারি হয় দুই মাস আগে ।তনিমার মিষ্টি স্বভাবের জন্য সকলের সাথে সমান ভাবে মেলামেশা, কথা বলার জন্য ডাক্তার থেকে নার্স, আয়া সকলেই ওকে মনে রেখেছে এবং সবাই বেশ ভালোবাসে । সবাই তনিমার খবর নেয় ,সাহায্য করে ।এদের মধ্যে আয়া ছন্দা দি তনিমা কে একটু বেশিই ভালো বাসে। ডেলিভারির সময় ছন্দা দি তনিমার কাছে ছিল, ওকে দেখাশোনা করা ,সাহায্য করা; তখন থেকেই তনিমার সাথে ছন্দা দির আলাদা একটা সখ্যতা গড়ে উঠেছিল ।


এরকম তো কতোজনের সঙ্গেই আয়াদিদি বা নার্সদের একটা ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তবে সেটা আর স্থায়ী হয় না । কিন্তু এক্ষেত্রে সম্পর্কটা টিকে ছিল । তনিমা ,হসপিটালে এলেই দেখা করতো , খোঁজখবর নিত। ফোনেও যোগাযোগ রাখত । ছন্দা দি, তনিমাকে বোনের মতো দেখত। রাত বিরেতে বাচ্চাটা কাঁদলে কোলে নিয়ে ঘোরানো, তনিমা বাথরুমে গেলে বাচ্চাটাকে দেখাশোনা করা ।বাচ্চা, মা দুজনারই খুব যত্ন করত ছন্দা দি।


কিন্তু সবাই পছন্দ করত না । শাশুড়িমা একদিন এসে দেখে বাচ্চা ছন্দা দির কোলে । রাগ করে তনিমাকে বললেন বাচ্চা সবার কোলে দেবে না । একটা আয়ার কোলে বাচ্চাকে দিয়ে দিচ্ছ কোনো বিবেচনা নেই তোমার ?


কিসের বিবেচনা মা ? আমার কাছে ওর পরিচয় শুধু আয়া নয় । তার আগে ও একজন মানুষ । তার থেকেও বড়ো কথা হল ওর মধ্যে মনুষ্যত্ব জ্ঞান আছে । যখন আমি অসুবিধায় পড়েছি ও আমার সাহায্য করেছে, নি:স্বার্থ ভাবে আমাদের দেখাশোনা করেছে । সেও তো একজন মানুষ মা। একজন ডাক্তারের কোলে, একজন নার্সের কোলে যদি আমার বাচ্চাকে দিতে পারি তবে একজন আয়ার কোলে কেন দিতে পারি না আমার বাচ্চাকে । কর্ম ছোটো বা বড়ো হউক তা নিশ্চয় মানুষের মনুষ্যেত্বের ,চরিত্রের বিচার করে না । ও একজন আয়া বলে কি ও একজন প্রতারক নাকি অসৌচ । হসপিটালে মানুষের সেবা করে, তাদের নোংরা পরিষ্কার করে বলে কি তার সংস্পর্শ খারাপ ? হতে পারে নোংরা তার হাতে লাগে মনে তো আর লেগে থাকে না আর ওই হাতের নোংরা ভালোভাবে ধুলেই পরিষ্কার হয়ে যায় কিন্তু মনের নোংরা কোনো ভাবেই যায় না ।


মা আপনিও আপনার মনের দ্বিধা দূর করে ওকে ওর কর্মের নিরিখে বিচার না করে ওর মানবিকতায় বিচার করুন ওকেও আপনার অন্য সবার সাথে আলাদা মনে হবে না আর এটা ভাবুন, আপনার সাধের নাতনির কতটা যত্ন ও নিয়েছে নিঃস্বার্থ ভাবে, বিনা পারিশ্রমিকে । মানুষ তার কর্মের জায়গায় ছোটো বড়ো হলেও মানুষ হিসেবে সবাই সমান ।