n/a

ছবিঃ ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর ব্যবহার .

2023-11-04 15:12:42

ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর ব্যবহার

ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরায় রয়েছে বহু ঔষধি ও পুষ্টিগুনাবলি। ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরায় রয়েছে  সৌন্দর্যচর্চার গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উপাদানসমূহ। চুলের যত্নের জন্য তো বটেই ত্বকের সুরক্ষা ও সুস্বাস্থ্যের জন্য বহু মানুষ ঘৃতকুমারী ব্যবহার করে থাকে ।

ঘৃতকুমারী সাধারণত বাড়ির বাগানে, ছাদের টবে ও ঘরে খুব সহজেই অল্প যত্নে বেড়ে ওঠে । ঘৃতকুমারীর সবুজ পাতার ভেতরে যে স্বচ্ছ রঙের পিচ্ছিল পদার্থ থাকে, তা অ্যালোভেরা জেল নামে পরিচিত। এই  অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারে ত্বক হয় নিখুঁত, মসৃণ ও আকর্ষণীয়।

শীতকালে প্রায় অনেকের চুল অনেক বেশি শুষ্ক,রুক্ষ ও মলিন হয়ে যায়। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই চুল উঠতে থাকে ও ভেঙে পরতে শুরু করে। বর্তমানে বাজারে যেসব প্রসাধনীর পাওয়া যায় টা দিয়ে  এ সমস্যা থেকে সব সময় মুক্তি সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা সাহায্য করতে পারে ।

ত্বকের যত্নে ঘৃতকুমারীর জেলের উপকারিতাঃ

  • অ্যালোভেরা জেল আমাদের ত্বকের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • ত্বকের ব্রণ ও পিম্পল দূর করতে সাহায্য করে।
  • অ্যালোভেরা জেল ত্বকের ডেড সেল দূর করে।
  • অ্যালোভেরা ত্বকের রুক্ষতা দূর করে প্রানবন্ত রাখে।
  • অ্যালোভেরা জেল প্রাকৃতিকভাবে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর করে।
  • অ্যালোভেরা জেল ত্বকে বয়সের ছাপ কমায় এবং তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • রোদে পোড়া দাগ, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে অ্যালোভেরা জেল।

ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধ করে ত্বককে প্রাণবন্ত করে তুলে । প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে আপনি যদি আপনার মুখে পাতলাভাবে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর জেল লাগিয়ে রাখুন এবং তা সকাল পর্যন্ত রেখে দিন।  তবে যদি আপনার ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে তাহলে  অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করবেন না। আপনার ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল কিনা তা পরিক্ষার জন্য আপনি আপনার হাতে অল্প পরিমাণ ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা জেল মেখে নিন এবং ২-৩ দিনের মধ্যে সেখানে যদি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না যায়, তবে আপনি নিশ্চিন্তে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী জেল  ব্যবহার করতে পারেন।

প্রাকৃতিক ভাবে টানটান ত্বকের জন্য ৫টি ঘৃতকুমারীর জেল ফেসপ্যাকঃ 

  • দই ও ঘৃতকুমারী ফেসপ্যাকঃ
  • এক চা-চামচ দই, এক টেবিল চামচ ঘৃতকুমারীর জেল, এক চা চামচ মধু অথবা লেবুর রস ভাল ভাবে ব্লেন্ড করে এই ফেসপ্যাক বানতে হবে। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য মধু এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্য লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাক ১০-১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

    ফলাফলঃ এই প্যাকটি সপ্তাহে তিন থেকে চার বার ব্যবহার করলে ভাল উপকার পাবেন। এই প্যাক শুষ্ক, সাধারণ ও তৈলাক্ত ত্বকে ব্যবহার করা যাবে।

  • ঘৃতকুমারী ও গোলাপ জলের ফেসপ্যাকঃ 
  • এক টেবিল চামচ ঘৃতকুমারীর জেল ও এক টেবিল চামচ গোলাপ জল একত্রে মিশিয়ে এই ফেসপ্যাক তৈরি করতে হবে । প্রথমে একটি বাটিতে ঘৃতকুমারীর জেলের সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এই ফেসপ্যাক মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন। অথবা এই ফেসপ্যাক মুখে দিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট পুরো মুখ হালকা ভাবে ম্যাসাজ করুন। প্রতি সপ্তাহে দুই-তিনবার এই ফেসপ্যাক মুখে লাগালে ভালো ফল পাবেন। 

    এই ফেসপ্যাক নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার রোদে পোড়া কালো দাগ, বয়সের ছাপ, ব্রণ ইত্যাদি খুব সহজে তারাতারি দূর হবে। এই ফেসপ্যাকটি শুষ্ক ত্বক, সাধারণ ত্বক, তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ব্যবহার করা যাবে। 

  • ঘৃতকুমারী ও হলুদের ফেসপ্যাকঃ
  • এ ফেসপ্যাকটি বানানোর জন্য এক টেবিল চামচ কাঁচা হলুদ অথবা এক চিমটি হলুদের গুঁড়ো আর এক চা-চামচ মধু, এক টেবিল চামচ ঘৃতকুমারীর জেল, কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল একসঙ্গে মিশিয়ে ফেসপ্যাকটি তৈরি করতে হবে। তারপর এই ফেসপ্যাকটি  মুখে, গলায় ও ঘাড়ে লাগাতে হবে। ১৫-২০ মিনিট মুখে রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

    ফলাফলঃনারী এবং পুরুষ উভয়ে এই ফেসপ্যাক লাগাতে পারবেন । প্রতি সপ্তাহে দুইবার ঘৃতকুমারী ও হলুদের ফেসপ্যাক লাগালে ভাল উপকার পাবেন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের ব্রণ, ক্ষত ,ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর হবে। আপনারা সব ধরনের ত্বকে এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করতে পারবেন।

  • মুলতানি মাটি ও ঘৃতকুমারীর ফেসপ্যাকঃ
  • এই ফেসপ্যাকটি তৈরির জন্য এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি এবং এক চা-চামচ ঘৃতকুমারীর জেল, অল্প পরিমান গোলাপজল অথবা ঠান্ডা কাঁচা দুধ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। এই ফেসপ্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে । তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে এক থেকে দুইবার ব্যবহার করলে দ্রুত উপকার পাবেন। 

    ফলাফলঃ ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে ত্বক ভালো এবং প্রাণবন্ত রাখে এই ফেসপ্যাকটি । 

  • কলা ও ঘৃতকুমারীর ফেসপ্যাকঃ
  • চার পিস কলার টুকরো এবং এক টেবিল চামচ ঘৃতকুমারীর জেল ভালো ভাবে মিশিয়ে এই ফেসপ্যাক তৈরি করে নিতে হবে। প্যাকটি  তৈরি হয়ে গেলে সাথে সাথে মুখে লাগিয়ে পুরো ১০-১৫ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাক সপ্তাহে এক থেকে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।

    ফলাফলঃএই ফেসপ্যাকটি আমাদের ত্বকে পুষ্টি জোগায় তার সাথে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে এই প্যাকটি ব্যবহারে ত্বক স্বাভাবিক হয়। এই ফেসপ্যাকটি ত্বক টানটান করতে সহায়তা করে থাকে। 


    সাবধানতা

    ঘৃতকুমারীর ফেসপ্যাক ব্যবহার করে যদি কারোর ত্বক জ্বালা করে, র‍্যাশ ওঠে, তাহলে এই প্যাক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে ।