ছবিঃ মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশনে ভুগছেন নাতো.
2023-08-28 23:40:11
মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশনে ভুগছেন নাতো
আমাদের দেশে রোজ কত শত মানুষ যে মানসিক অবসাদের বা ডিপ্রেশনের কারণে প্রাণ হারায় সেই তথ্য বা খবর আমরা সবাই হয়ত জানিনা বা রাখিনা । বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের চুপিসারে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যকেও বেশ অগ্রাধিকার দিতে হবে ।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে যে, বিশ্বের প্রতিটি দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১০% - ২০ % মানুষ মানসিক অবসাদের বা ডিপ্রেশনের শিকার হন । বর্তমানে সাধারণত ১৭ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ছেলমেয়েরা মানসিক অবসাদের বা ডিপ্রেশনের শিকার হয়ে থাকে।
প্রাত্যহিক কাজের চাপে মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন যেন আমাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। মানসিক চাপ বা অবসাদ যখন অতিরিক্ত মাত্রায় হয়ে যায় তখন আসলে কিছুই আর ভালো লাগে না। তাই মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া খুব জরুরি।
মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন একদিনে আসেনা। মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন এবং মন খারাপ দুটি কিন্তু ভিন্ন জিনিস। মানসিক অবসাদে বা ডিপ্রেশনে ব্যক্তি সবকিছুতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে,নিজের কাছেই নিজের গুরুত্ব কমতে থাকে এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায় ।
আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার ফলে যদি কোনো ব্যক্তির মাথায় আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা চলে আসে বা সে অবসাদগ্রস্ত বা ডিপ্রেশড হয়ে পড়েন তাহলে তাদের মধ্যে বেশ কিছু আচরণ প্রকাশ পায়। তবে আবার অনেকের বেলায় এটি ভিন্নও হয়ে থাকে । এমন অনেক মানুষ আছেন যারা আসলে ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে গেলেও বাইরের কাউকে সেটি বুঝতে দেন না।
মানসিক অবসাদের বা ডিপ্রেশনের কারণগুলো হলো:
- পূর্বের বা অতীতের কোনও ভুল থেকে অপরাধ বোধে ভুগতে থাকলে তার থেকেও মানসিক চাপ বাড়ে। অতীতে ভুল করেছেন বা আপনার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে তা ভেবে বর্তমানেও কষ্ট পাওয়া, অনুতাপ করা, এসবও স্ট্রেস কারণ হয়ে ওঠে। আর এই ধরনের মানসিক অবসাদ কাটিয়ে ওঠা অনেক কঠিন।
- নিজেকে আঘাত করা বা আত্মহত্যার চিন্তাও প্রায় অনেকের হয়ে থাকে । আমাদের অনেকেরই অভ্যাস থাকে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা করার। সামান্য জিনিসকেও আমরা অনেকটাই গুরুত্ব দিয়ে ফেলি নিজেদের ভাবনায়। আর এর থেকেই মনের নেগেটিভিটি বাড়তে থাকে আর মানসিক অবসাদের সৃষ্টি হয়।
- যারা মানসিক অবসাদে ভুগেন তারা সবকিছুতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন । কোনও কিছুই তাদের ভাল লাগে না,মন খারাপ লাগবে , বিষণ্ণতায় ভুগবেন, সবসময় নিজেকে একা মনে হবে। কোনও কাজে মন বসবে না, কাছের মানুষের সঙ্গে সময় কাটাতেও ইচ্ছে করবে না।
- তাদের সামাজিক মেলামেশাও কমে যাবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত আসক্তি বেড়ে যাবে । মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশড হলে মানুষ সবার সাথে মেলামেশায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এবং একাকীত্বা বেড়ে যাবে।
- পরিবেশগত কারণেও মানসিক অবসাদ আসতে পারে। হটাৎ খুব গরম, আবার খুব ঠান্ডা বা গুমোট আবহাওয়ার কারনেও মানুষ অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে ।
- মানসিক অবসাদের বা ডিপ্রেশনের কারনে খিদে কমে যাবে বা খিদে বেড়ে যাবে। অতিরিক্ত স্ট্রেস থেকে চিন্তা থেকে অনেকের এর অভ্যাস তৈরি হয় । মাত্রাতিরিক্ত চিন্তায় হৃদস্পন্দনও বাড়ে, নিশ্বাসের গতি ধীর হয়, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও দেখা দেয়। অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার ও প্যানিক ডিসঅর্ডার যদি একটানা চলতে থাকে তাহলে অবসাদ, মাথাব্যথা, ঝিমুনিভাব, কাজে অনীহা দেখা দেয়।
ডিপ্রেশনের শারীরিক লক্ষণ
- মানসিক অবসাদগ্রস্ত মানুষ জীবনকে অনেক নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা শুরু করে। নিজের প্রতি তার নিজের ঘৃণা এমন স্তরে চলে যায় যে সে ভাবে তার এবং তার আপনজনদের জীবনে ঘটে চলা সমস্ত নেতিবাচক ঘটনার জন্য সে নিজেই দায়ী।
- মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তি জীবনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তার পছন্দের জিনিস, পছন্দের কাজ কোনোকিছুই আর তার ভালো লাগেনা। নিজের পছন্দের কাজগুলি তারা করতে ভুলে যায়, কোনো কিছুই তাদের আর আনন্দ দেয় না।
- মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তি কোনো মানুষকে সহজে বিশ্বাস করতে পারেননা । অনেকসময়ই দেখা যায় তারা নিজেদের সমস্যার মুখোমুখি দাড়াতে ভয় পায়। অন্য লোকের সাথে তো দুর নিজের সাথেই নিজের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চায়না।
- মানসিক অবসাদের ফলে ব্যক্তি সবসময় ক্লান্ত অনুভব করে। কোনোকিছু করতেই তার উৎসাহ লাগেনা যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘুম, ঘুমের সময়ের বদল ইত্যাদি দেখা যায়।
- মানুষের ক্ষুধার উপর প্রভাব ফেলে মানসিক অবসাদ। কারোর কারোর ক্ষিদে একদম পায়না, আবার কেউ কেউ সবসময় ক্ষুধার্ত বোধ করে থাকেন । যার ফলে হঠাৎ করেই তাদের স্বাভাবিক ওজনের পরিবর্তন ঘটে।
- তারা ভালো আছে নাকি খারাপ আছে এইটার উত্তর তারা নিজেরাই জানেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাকে এই প্রশ্ন করা হলে তারা যেন একটু বেশীই জোর দিয়ে বলেন যে আমরা অনেক ভালো আছি । আসলে কিন্তু তারা নিজেরাও এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে অনেক ভয় পান।
- ইচ্ছে করেই নিজের জন্য তারা এমন পরিবেশ বা জীবন বেছে নেন যাতে নিজের সাথে নিজে সাক্ষাৎকার করার সময়ই অবশিষ্ট না থাকে। চাকরি, পড়াশোনা বা কাজের চাপ এত বেশী নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে নেন যে তাতেই শেষমেষ তারা তলিয়ে যান। দিন শেষে অতিরিক্ত ক্লান্তি আর ভাবার সময় দেয়না। কাজটাকে যেন পালিয়ে যাওয়ার পথ হিসেবে বেছে নেন তারা।
- জীবনের প্রতি একটি তাচ্ছিল্য ভাব চলে আসে। যা ঘটে ঘটুক, এরকম একটা মানসিকতায় এগিয়ে চলে তারা এবং ফলস্বরূপ নিজের অনেক ক্ষতি করে বসে।
ডিপ্রেশনের চিকিত্সা
এই লক্ষনগুলি যদি আপনার কোনো কাছের বা আশেপাশের ব্যক্তির মধ্যে দেখতে পান তাহলে তার সাথে কথা বলুন।এইরকম ব্যক্তি যেকোনো সময় নিজেকে শেষ করে দেওয়ার মতন চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। । কিছু কিছু উপায় থেকে যার মাধ্যমে খুব সহজে আপনি মুক্তি পেতে পারেন মানসিক চাপ ও অবসাদ থেকে-
ধীরে ধীরে শ্বাস নিন
শান্ত হয়ে বসুন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে থাকুন । একবার শ্বাস নেয়ার সময় মনে মনে ১-৫ গুনুন। এরপর খুব ধীরে ধীরে আবার শ্বাস ছাড়ুন। পরপর কয়েকবার এভাবে শ্বাস গ্রহণ আর ছাড়ার কাজটি করুন। শান্তি পাবেন।
পুরনো কিছু ছবি দেখুন
পুরনো দিনের অ্যালবাম বা গ্যালারিতে চোখ রাখুন। সুখের স্মৃতিযুক্ত ছবিগুলোতে চোখ বুলান। ভালো স্মৃতির ছবিগুলো দেখলে মনও ভালো হয়ে যাবে ।
চোখ বন্ধ করে রাখুন
মানসিক চাপ কমাতে কিছুটা সময় চোখ বন্ধ করে রাখুন। কাজের প্রতি একাগ্রতা বৃদ্ধি পাবে। দেহ থেকে নেতিবাচক ভাবও দূর হবে অনেকটা।
ইচ্ছেমত ডেয়রি লিখুন
কোনভাবেই মনকে ফুরফুরে আর সতেজ করতে পারছেন না? এবার তবে কাগজ কলম নিয়ে বসুন। কেন এত মানসিক অবসাদ আপনার? কারণগুলো এক এক করে খাতায় লেখুন। তখন হয়তো নিজেই খুঁজে বের করতে পারবেন কেন আপনি এত মানসিক চাপে আছেন ।
কৃতজ্ঞ থাকুন
মনে শান্তি থাকলে সবকিছুই ভালো লাগে। নিজের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে অনেক কিছু দিয়েছে যা হয়ত অন্য কারোর নেই। সমাজে আপনার চেয়েও খারাপ অবস্থানে অনেকেই আছে। মানসিকভাবে তৃপ্ত আর কৃতজ্ঞ থাকলে মন ভালো থাকে।
স্ট্রেস বল ব্যবহার করুন
বাজারে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ দূর করার জন্য এক ধরনের বল পাওয়া যায়। এমন একটা বল কিনে অফিসের ডেস্কে রেখে দিন। খুব বেশি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়লে কিছুটা সময় স্ট্রেস বল হাতে নিয়ে চাপুন। কাজে মনোযোগ ফিরে আসবে।