ছবিঃ ছারপোকা থেকে মুক্তির উপায়.
2023-03-12 14:04:52
ছারপোকা থেকে মুক্তির উপায়
ছারপোকা চিনে না এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ছারপোকা সিমিসিডে গোত্রের একটি ছোট্ট পতঙ্গ বিশেষ।এটি সাধারণত ৪-৫ মিমি বড় হয় যা প্রায় একটি আপেলের বিচির মত । অনেক সময় অনেকে একে ছোট তেলাপোকা বলে ভুল করেন। বিছানা, মশারি, বালিশ, ট্রেন, বাসের আসন,ম্যাট্রেস, সোফা এবং অন্যান্য আসাবাবপত্র ছারপোকার অন্যতম পছন্দের আবাসস্থল । ছারপোকা সাধারণত রাতেই অধিক সক্রিয় থাকে এবং মানুষের অগোচরে রক্ত চুষে নেয়।
এরা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণির রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা আমাদের অজান্তে আমাদের রক্ত চুষে খায়। ছারপোকা সারা বিশ্বেই দৃষ্টিগোচর হয়। ৭০-৮০ ফারেনফাইট তাপমাত্রা এদের জন্যে আদর্শ। এই তাপমাত্রায় খুব দ্রুত এরা বৃদ্ধি লাভ করে এবং বছরে তিনবার প্রজননে অংশ গ্রহণ করে।
ছারপোকা, রক্তচোষা এই পতঙ্গটি সত্যিই খুব বিরক্তিকর। ঘরে এটির আক্রমণ ঘটলে অশান্তির শেষ থাকে না। কারণ ছারপোকা রক্ত খেয়ে আপনার রাতের ঘুমকে হারাম করে।
এমনি ছারপোকার কামড়ে অনেককে অতিষ্ট থাকতে হয়। তবে অনেকেই জানেন না ছারপোকার কামড়ে রোগও ছড়ায়জাদীর্ঘদিন ছারপোকার কামড় খেলে একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই সঙ্গে শারীরের কর্মক্ষমতা এবং আয়ুও কমে যায়।
দীর্ঘদিন ছারপোকার কামড়ে যেসব রোগ হতে পারে:-
শ্বাসকষ্টঃ
ঘরের যে জায়গায় ছারপোকারা বাসা বাঁধে, সেখানকার হাওয়া-বাতাসে এত জীবাণু ছড়িয়ে যায় যে তা যদি একবার শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে যায় তাহলে মারাত্মকভাবে শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
সংক্রমণঃ
ছারপোকা কামড়ানোর পর ক্ষত স্থানে মারাত্মক চুলকানি শুরু হয় এবং একাধিক ক্ষতিকর জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে যায়। আর এমনটা হওয়া মাত্র শরীরের ভিতরে বিভিন্ন জটিল সংক্রমণ দেখা যায় ।
এলার্জিঃ
ছারপোকা কামড়ালে কারও কারও মারাত্মক ধরনের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয়। সেক্ষেত্রে ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস কষ্টও বাড়তে শুরু করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ঠিক সময়ে যদি চিকিৎসা শুরু করা না হয়, তাহলে কষ্টটা মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাই যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত সাবধান থাকুন।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়েঃ
ছারপোকার প্রতিনিয়ত আক্রমণের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শরীরের ভেতরে বেশ কিছু পরিবর্তন হওয়ার কারণে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের মাত্রা বাড়ে।>
একাকিত্বঃ
সবারই মনে ছারপোকাদের নিয়ে একটা ভয় রয়েছে। কেউই এমন বাড়িতে যেতে চান না যেখানে ছারপোকার রাজত্ব রয়েছে। এজন্য এসব বাড়ির বাসিন্দারা একাকিত্বে ভোগেন, যা ধীরে ধীরে তাদের শরীর এবং মনের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অ্যানিমিয়াঃ
যারা দীর্ঘদিন ধরে ছারপোকার কামড় খেয়ে আসছেন তাদের শরীরে লহিত রক্ত কণিকার মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। আসলে বেড বাগের মূল খাবারই হল রক্ত।
ছারপোকা কামড়ালে কি করবেন-
ছারপোকা কামড়ালে যখন প্রথম দেখবেন তখনই জীবাণুনাশক সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এর পরে নীচের প্রাকৃতিক জিনিসগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
বেকিং সোডা ও পানির প্রলেপ
বেকিং সোডা ও পানির প্রলেপ একটু ঘন করে বানাবেন । কামড়ানো স্থানে এই পেস্ট দিয়ে রাখুন । দেখবেন জ্বালাপোড়া কমবে। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
লবণ
লবণ একটি প্রাকৃতিক ব্যাক্টেরিয়ানাশক । কামড়ানোর জায়গায় লবণ ঘষলে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া থেকে দ্রুত কমে যায়।
কমলার রস
একটি তুলা টুকরা নিয়ে এটি কমলার রস দিয়ে ভিজিয়ে আক্রান্ত স্থানে কিছু সময় দিয়ে রাখুন জ্বালা ভাব দূর হবে।
মাউথ ওয়াস
মাউথ ওয়াসে থাকে ‘ইথানল’, যা একটি জীবানুনাশক উপাদান এবং অ্যালকোহল। তুলার নিয়ে তা মাউথওয়াশে ডুবিয়ে কামড়ানো অংশে প্রয়োগ করুন জ্বালা ভাব কমে যাবে।
কলার খোসা
কলার খোসার ভেতরের অংশে থাকা এই উপাদানগুলো কামড়ানো স্থানে ঘষলে জ্বালাপোড়া কিংবা চুলকানির অনভূতি প্রশমিত হবে।
দারুচিনি ও মধু
দারু চিনি ও মধু এই দুটি উপাদান একত্রে মিশিয়ে ছারপোকার কামড়ের চিকিৎসায় কাজে ব্যবহার করতে পারেন। দুই তিন টেবিল-চামচ দারুচিনির গুঁড়ার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে মাখতে রাখুন এর পরে শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন তিন থেকে চারবার পেস্টটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ডাক্তারে সাথে যোগাযোগ
ঘরুয়া পদ্ধতিতে ব্যাথা বা জ্বালা ভাব দূর না হলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় মেডিকেশন নিন।
ছারপোকা একটি বিরক্তির কীট। এটি কামড়ে খুব জ্বালা পোড়া করে । শুধু যিনি আক্রান্ত হয়েছেন ইনি এর যন্ত্রণার কথা ভাল বলতে পারবেন। তাই বাসা বাড়িতে ছারপোকা দৃষ্টিগোচর হওয়া মাত্র এটি নির্মুলে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।এই ছারপোকা যাদের বাড়িতে আছে তারাই বুঝতে পারে এটার যন্ত্রনা। তবে চলুন জেনাওয়া যাক ছারপোকা দূর করার উপায়।
১ .রোদ/ সূর্যের তাপ :
ছারপোকা দমনে রোদ একটি অত্যন্ত কার্যকরী উপায়।ছারপোকা দমন এর আরেকটি পদ্ধতি হল রোদ এর ব্যবহার। সেই প্রাচীন কাল থেকেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। গ্রামেগঞ্জে এখনো এই পদ্ধতির প্রয়োগ দেখা যায়। এক্ষেত্রে যেসব জিনিস গরম পানি দিয়ে ধোয়া যাবে না সেগুলো সকালে রোদে দিতে হয়।শক্তিশালী রোদে তাপমাত্রায় ছারপোকাগুলো মারা যায় এবং সাথে তাদের ডিমও।
২ .পুদিনাপাতা:
অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ছারপোকা পুদিনাপাতার গন্ধ সহ্য করতে পারে না। তাই বিছানা থেকে ছারপোকা তাড়াতে বিছানার নিচে পুদিনা পাতা রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে শুঁকনো পুদিনা পাতাতেও কাজ হবে। এছাড়া আপনি আপনার সোফার পাশে, বাড়ির প্রতিটি কোণে কোণেও পুদিনা পাতা রাখতে পারেন। আর এজন্যই অভিজ্ঞরা ভ্রমণের সময় বা ট্যুর এর বিছানা গুলোতে শুঁকনো পুদিনাপাতা রাখতে পরামর্শ দেন।
৩ .ন্যাপথলিন :
ঘরের ছারপোকা তাড়াতে ন্যাপথলিন খুবই কার্যকারী। পোকাটি তাড়াতে অন্তত মাসে দু’বার ন্যাপথলিন গুঁড়ো করে বিছানাসহ উপদ্রবপ্রবণ স্থানে ছিটিয়ে দিয়ে রাখুন। দেখবেন ঘরে ছারপোকা হবে না।
৪ .কেরোসিনের স্প্রে :
ছারপোকা রূম থেকে দূর করার উপায় ও ঔষধের নাম এর মধ্যে কেরোসিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কেরোসিন এর মাধ্যমে আমরা আমাদের রুম থেকে ছারপোকা দূর করতে পারি। এটি খাটের বিভিন্ন ফাকের মধ্যে স্প্রে করে দিলে ছারপোকা আর হবে না।
৫ .ডিটারজেন্ট মেশানো জল :
এক লিটার জলে ডিটারজেন্ট যেমন সার্ফ এক্সেল / সানলাইট ঘন করে মিশিয়ে স্প্রে করুন। এ উপায়ে স্প্রে করার ফলে ছারপোকা সহজেই মারা যাবে।
৬ .বিভিন্ন জিনিসের ব্যবহার :
এই ক্ষেত্রে আপনার লাগবে কালোজিরা, গোলমরিচ আর নিমপাতা , উক্যালিপ্টাস গাছের পাতা বা আকাশি গাছের পাতা।এই তিনটি উপাদান এক সাথে মিশিয়ে তোষকের তলায় ছড়িয়ে দিন , গাছের পাতা গুলি আপনি বেশি পরিমানে দিতে পারেন। কালোজিরা আর গোলমরিচ অনেকগুলি ছোট ছোট কাপড়ের পোটলা করেও দিতে পারেন, সেই ক্ষেত্রে পরবর্তী কালে পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে তবে ছড়িয়ে দিলে তাড়াতাড়ি ফল পাবেন। এই গুলি থেকে একটা ঝাঁজালো গন্ধ নির্গত হয় যা ছারপোকা বা অনান্য পোকামাকড় সহ্য করতে পারে না ও সেখান থেকে পালিয়ে যায়।